শাওন রিছিল’র একগুচ্ছ কবিতা │ খু•রাং

শাওন রিছিল

(৪ মার্চ ১৯৮৯ - ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১)

শূন্য দশকের ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ হতে কবিতা লেখা শুরু করেন। হাতের কাছে যখন যা পান তাই পড়তে শুরু করতেন। তার পরও জয় গোস্বামী, মল্লিকা সেন গুপ্ত লেখা আলাদাভাবে পছন্দ করতেন। জীবদ্দশায় জানিয়েছিলেন, সমকালীন কবিদের মধ্যে তার পছন্দ অরবিন্দ চক্রবর্তীর কবিতা।

এ ছাড়া মতেন্দ্র মানখিন, পরাগ রিছিল কবিতা তাকে সবসময়ই আলোড়িত করতো। গত শতকের ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। পিতা ক্রিপসন দারিং গত হয়েছেন। মা বিচিত্রা রিছিল। স্ত্রী নিপা ম্রং। ছেলে দামা বিষখ ম্রং। স্বভাবে ঘরকুনো কবি কবিতার বিষয় বৈচিত্র্যে স্বতন্ত্র স্বর এনে ইতোমধ্যে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছিলেন। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ মাত্র ৩২ বছর বয়সে হঠাৎই ব্রেইন স্ট্রোক করে কবি ধরাধাম ছেড়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন।


পাঠকদের জন্য এ  কবি’র একগুচ্ছ কবিতা।

 

আমাদের বিকেল

ছাড়পত্র পেল বৃদ্ধ ডাকঘর বহু মহাকাল ধরে

ঝুলে থাকা পৃথিবীর কোমড় থেকে,

এখন ডাক এলে খুঁজে ফিরুন কোটি বসন্ত

বছরান্তে জানালার পাশে বিশ্রামে থাকুক অপেক্ষা

বিদায় বেলায় উপযুক্ত ভ্যাট হতে পারে

আস্তিনে লুকানো বিনম্র এক সকাল

আপনাদের আলোচনার বিষয় হতে পারে,

অবসরে চাষ হবে কিনা মখমলের মোড়ানো দীক্ষা।

অতএব, দাঁড়িয়ে থাকুন শেষ সীমান্তে

দেখে নিন পিঁপড়েদের মিছিল

অজস্র পায়ে ঘরে ফিরে লাল রঙা বিকেল

যে বিকেলে অবসর নেয়, সযত্নে লেখা অভিমান।


রিং মাস্টার

ডরথি,

রাতভর অন্ধকার পোষ মানানোর নাম করে

খাম বন্দি বাগান পাঠালে বেনামে।

তোমার পোষা বিস্তীর্ণ মাঠের নাম দেয়া যাকঘুম

প্রতিদিন সকালেঘুমমাড়িয়ে হেঁটে আসা হবে

চৌখাট থেকে বহু যোজন দূর ঢেউয়ের মহা সড়ক।

যেই দিন শুরু হবে বৃষ্টির হাত ধরে মেঘেদের ভূমি স্পর্শ

জানিয়ে দেয়া হবে, বিধ্বস্ত ঈশান কোণের হাওয়ার

সেবায় নিয়োজিত যমুনার জল পরম মমতায়

সুর তুলে সুরজ রঙা গানে।

বহু রাত জেগে লিখে যেতে হবে

অন্ধকার পোষ মানানোর কাব্য।


হেয়ালী কুয়াশা

ছুঁয়ার বাইরে অনুভূতিগুলো থেকে যায় দ্রোহী

যেখানে থেমে থাকে প্রস্তুতি, নিত্য দিনের আগ্রহে

সেখানেই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে লাশকাটা ঘরের লালা।

এক বিন্দুনস্ট’, ললাট ভরে দাবিয়ে রাখে শিরস্ত্রাণ।

হাঁটা পথ পৌঁছে যায় শীত নিদ্রায়

উপেক্ষিত কুয়াশা খুঁজে হেয়ালী হাসির কারখানা।

যাবেন নিশ্চয়,

ভদ্র পাড়ায়,

কফি আর নুনতা বিস্কুট পরস্পরকে আলিঙ্গনে

শব দেহের উত্তরসূরি করে চোখের নুনা জল।

 

আমার সপ্নরা

এই যে বিছানা পাতা, সপ্নরা শুয়ে থাকে রাতভর

দিনের বিচারে কোন জন?

যদিও-বা এক রাত্রি ধুয়ে দেয় সমস্ত ডিটারজেন্ট

গিয়ে থাকবেন নাম ছাড়া কোন নাম বন্দর

জল ছলছল তেঁতুল পা

নতুন বধু, নতুন গা।

দেখে আসুন বোতল ভর্তি ঢাকের আর্তনাদ।

পা মিলে পায়ের সাথে, হাতে হাত বন্দি

গলার সাথে গলা, সম্মিলিত সন্ধি।

মিলন মেলা থেমে যায় হাত বাড়ায় কুয়াশা

দিগন্তে মুছে চা শ্রমিকের লাল ঘাম।


অধিকারের সূত্র

ডরথি,

অধিকারের সূত্র ঘষে মেঝে ঠিক করে নিও

পল্লবিত হাহাকার ইস্তফা নিয়ে নেবে

জাড় রঙা লু বাতাসের সন্ধ্যায়।

এক এক করে বায়না করে রাখা,

পদ্ম পাতায় মোড়ানো সকাল

তুলে রেখে দিও, আলমিরার উঁচু তাকে।

খুব বেশি সাঁজতে ইচ্ছে হলে

হাত বাড়িয়ে নামিয়ে নিও

ভাত রঙা পূর্ণিমার চাঁদ।

ডরথি,

জানো নিশ্চয়, অধিকারের সূত্র

বায়না করা আছে, বিনিময়ে হেঁটে এসো

বহু দূরের পথ।


উত্তরের পাহাড়

আমার বেড়ে ওঠা উত্তরের পাহাড়ের বিপরীতে।

ঘুম ভেঙে গেলেই দেখা পেতাম নীলাভ এক পাহাড়ের,

হাড় জির-জিরে পাহাড়ের ঠিক মাঝখানটায়

ন্যাড়া ছিল, তারপরও বুকের মাঝে লালন করতাম

উত্তরের পাহাড়, গরিব এক পাহাড়।

একদিন বন্ধুদেরকে বলেছিলাম

দেখ, এই পাহাড়টা আমার, আমি এঁকে লালন

করি বুক মাঝারেঠিক সেদিন থেকেই

ওই পাহাড় আমার।

কে জানে আমি ছাড়া কি গরিব পাহাড়টা

ঠিক মতো খায় কিনা, মৃদুু বাতাসে গুনগুন করে

গায় কিনা?

এই যে ব্যস্ত জীবন, এই জীবনের অবসর হলেই

আবার চলে যাব ন্যাড়া পাহাড়ের কাছে।

আমার উত্তরের পাহাড়ের কাছে।

Post a Comment

0 Comments